পোলিশ রেফারি স্জিমন মারচিনিয়াক শনিবারের জার্মানি ও সুইডেনের উত্তেজনাকর ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজানোর পর সামাজিক মাধ্যমে মানুষের আনাগোনা দারুণভাবে বেড়ে যায়।
সামাজিক মাধ্যমে প্রায় সবার পোস্ট, টুইট বা মন্তব্যেই টনি ক্রুসের শেষ মিনিটের ফ্রি কিকের কথা লেখা হয়।
তার পাশাপাশি আরেকটি বিষয়েও পোস্ট করে মানুষ।
‘নেইমারের মত কান্না’ করেননি বলে প্রশংসা করা হয় ক্রুসের।
পরের দিনই ইনজুরি সময়ের গোলে জয় পাওয়ায় ম্যাচশেষে কান্নায় ভেঙে পড়েন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
ব্রাজিল সমর্থকরাও সেদিন সামাজিক মাধ্যমে অসহানুভূতিশীল মন্তব্যই করেছেন। আর এ থেকেই এবারের বিশ্বকাপে নেইমারের অবস্থাটা বোঝা যায়।
এবারের বিশ্বকাপে সবাই বিশ্বের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়ের সমালোচনায় আগ্রহী।
গত কয়েকসপ্তাহে নেইমারকে নিয়ে তৈরি করা হাস্যরসাত্মক পোস্টগুলো ছড়িয়ে পরেছে সামাজিক মাধ্যমে।
যে বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা চলছে সেটি হলো, ফাউল আদায় করতে নেইমারের অতি অল্পতেই পড়ে যাওয়া ও আহত হওয়ার ভান করা।
সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে রিও ডি জেনিরো’র একটি পানশালায় এমনও ঘোষণা দেয়া হয় যে ‘নেইমারের প্রতিটি ডাইভের জন্য একটি করে পানীয়’ দেয়া হবে বিনামূল্যে।
গত বছর ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশী অর্থের বিনিময়ে বার্সেলোনা থেকে প্যারি সাঁ জার্মেইয়ে যোগ দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় হন নেইমার।
তাঁর বিলাসবহুল জীবনযাত্রার কারণে অনেকেই তাঁকে কিছুটা নেতিবাচকভাবে দেখেন। যদিও ব্রাজিলে আরো অনেকে মিলিয়নিয়ার ফুটবলারই আছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও মাঝেমধ্যেই নেইমার তাঁর মেজাজ হারান।
কোস্টারিকার বিপক্ষে ম্যাচের পর মাঠে তাঁর কান্নার সমালোচনা সম্পর্কে পড়ে তার ক্রুদ্ধ ইন্সটাগ্রাম পোস্টে লেখেন “টিয়া পাখিও কথা বলতে পারে।”
কোস্টারিকার বিপক্ষে ম্যাচে রেফারির সাথে অসদাচরণের কারণে হলুদ কার্ড দেখেন নেইমার। ভিডিও অ্যাসিস্টান্ট রেফারির রিভিউ’র পর তাঁর একটি পেনাল্টি আবেদন নাকচ হয়ে যায় যেখানে নাটকীয় ব্যবহারে রেফারিকে প্ররোচণার চেষ্টার অপরাধে লাল কার্ডও দেখতে পারতেন তিনি।
তবে ঐ ম্যাচে গোল করে অনেক সমালোচনারই জবাব দেন তিনি।
নেইমারের সমর্থনে ব্রাজিলের সাবেকরা
কোস্টারিকার বিপক্ষে ঐ গোলটি ছিল নেইমারের ৫৬তম আন্তর্জাতিক গোল। ঐ গোল করে ব্রাজিলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলস্কোরারের তালিকায় তৃতীয় স্থানে উঠে এলেন নেইমার।
আর ১৯৯৪ বিশ্বকাপজয়ী রোমারিও – যাকে টপকে তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলস্কোরার হলেন নেইমার – তিনি অবশ্য প্রশংসাই করেছেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টারের।
ইন্সটাগ্রাম পোস্টে রোমারিও লিখেছেন, “তুমি যা পারো আর যা করতে সক্ষম তা এই বিশ্বকাপে এখনো দেখাতে না পারলেও আমি বিশ্বাস করি তুমি পারবে।”
১৯৭০ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ও ব্রাজিলের অন্যতম সম্মানিত ফুটবল বিশেষজ্ঞ টোস্টাও মনে করেন অতি অভিনয়ের কারণে নিজেকে ও দলকে বিপদে ফেলতে পারেন নেইমার।
কোস্টারিকার বিপক্ষে ম্যাচের পর টোস্টাও লেখেন, “তিনি মাঠে অভিযোগ করতেই থাকেন আর মেজাজও প্রদর্শন করেন। এরকম ক্ষেত্রে সবসময়ই কার্ড দেখার সম্ভাবনা থাকে।”
“ওর মাঠের বাইরের কাজকর্মের চেয়ে মাঠের ভেতরের আচরণ আমাকে বেশী ভয় পাওয়ায়।”
সমস্যা হলো নেইমার যাই করেন তা নিয়েই বিশ্লেষণ শুরু হয়ে যায়।
কোস্টারিকার বিপক্ষে ম্যাচের পর তাঁর কান্না নিয়ে মনোবিশারদ থেকে শুরু করে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এক্সপার্ট, সবাই নানাবিধ আলোচনা করেছেন ব্রাজিলিয়ান গণমাধ্যমে।
এমনকি ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট লুই ইনাসিও লুলা ডা’সিলভা, যিনি বর্তমানে কারাবন্দী রয়েছেন, ব্রাজিলের একটি টেলিভিশনের ক্রীড়া অনুষ্ঠানে বার্তা পাঠান।
লুলা লেখেন, “নেইমারের কান্নার দৃশ্য থেকেই তার মানসিক অবস্থার প্রমাণ পাওয়া যায়।”
সূত্র, বিবিসি